Tuesday, November 13, 2018

ইন্টারনেট কি বানাচ্ছে আপনাকে? সুপারহিউম্যান নাকি সুপারফ্রীক?

ইন্টারনেট ছাড়া আমরা এখন সম্ভবত এক পা ও সামনে আগাতে পারি না। আমাদের জীবনে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেটের প্রয়োজন নেই। খাবার-পোশাক থেকে শুরু করে চাকরি-ব্যবসা এমনকি শিক্ষা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই আমরা হয়ে আছি ইন্তারনেট নির্ভর। সত্যি কথা বলতে আমরা হয়ে আছি অতি-ইন্টারনেট নির্ভর। কিছুদিন পর অবস্থা না এমন হয়ে যায় যে ইন্টারনেটের সাহায্য ছাড়া আমরা খেতে পারব না কিংবা গোসল করতে পারব না 😜😜😜। এমন মানুষ এখন অহরহই দেখা যায় যে সারাদিনই অনলাইনে থাকে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টার মাঝে ঘুমানো আর খুব প্রয়োজনীয় কিছু কাজ বাদে এরা অনলাইন থেকে যায় না। ইন্টারনেটের প্রতি এমন নির্ভরশীলতার কারণে আমরা প্রভাবিত হচ্ছি ইন্টারনেট দ্বারা এবং ইন্টারনেট থেকে। প্রযুক্তির অভিনব সব আবিষ্কারের কারণে নতুন প্রজন্মের মানুষেরা ইন্টারনেটের প্রতি আর বেশি মাত্রায় নির্ভলশীল হয়ে পড়ছে। কারণ, নতুন নতুন সব প্রযুক্তি পণ্য বানানোই হচ্ছে ২৪ ঘন্টা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করার জন্য। ইন্টারনেট অফ থিংস নামের নতুন টেক-বিপ্লবটি এর জন্য দায়ী। ইন্টারনেটের প্রতি নির্ভরশীলতা অবশ্যই ক্ষতিকর। আবার ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে উপকারও আছে অনেক। কিন্তু ইন্টারনেট থেকে উপকার পেতে হলে অবশ্যই ইন্টারনেটের ব্যবহারকে করতে হবে পরিমিত। জ্বী হ্যাঁ, ইন্টারনেট ব্যবহারে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, পেতে বাধ্য। স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই বোঝা যায় বই পড়ার থেকে ইন্টারনেটে সার্ফিং করা অনেক বেশি জটিল। কোন একটি সুনির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পেতে আমাদের অবশ্যই সুচিন্তিত কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করতে হয়। প্রয়োজন হয় মস্তিষ্কের কাজের। একটা গবেষণা করা হয় মধ্যবয়স্ক এবং বৃদ্ধদের মাঝে, তাদের একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করতে বলা হয়। তখন করা একটি ব্রেন স্ক্যান থেকে দেখা যায় সাধারণ মানুষদের তুলনায় তাদের মস্তিষ্ক সার্চ করার সময় বেশি কার্যক্ষম ছিল। পরবর্তীতে তাদেরকে এক সপ্তাহ প্রতিদিন এক ঘন্টা করে ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে বের করতে বলা হয়। এবং এক সপ্তাহ পরের রিপোর্টে ইন্টারনেট ব্যবহার করায় তাদের মস্তিষ্ক ছিল সাধারণত যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না তাদের থেকে কয়েকগুণ বেশি কার্যকরী। এই গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় ইন্টারনেট সার্ফিং আমাদের শর্ট-টার্ম মেমোরি এবং দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা বাড়ায়। তাই বলা যায় ইন্টারনেট ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্ককে আরো বেশি কার্যক্ষম করে তুলে। বাড়িয়ে তুলে চিন্তা করার ক্ষমতা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা। ইন্টারনেট আমদের করে দিয়েছে পৃথিবীর সবার সামনে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ। ফেসবুক, টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা সবাই চাই বেশি বেশি ফলোয়ার, লাইক, টিউমেন্ট এবং শেয়ার। আর এ সব কিছু পাবার জন্য অবশ্যই ভাল কিছু করতে হবে। কোন একটি স্ট্যাটাসে বেশি লাইক পাবার জন্য আমাদের স্ট্যাসটি অবশ্যই স্ট্যান্ডার্ড হতে হবে, মানুষ পছন্দ করবে এমন কিছু হতে হবে। একটি ছবির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে ছবিটিকে হতে হবে আকর্ষনীয়, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য। আর এসব কিছু করার জন্য আমাদের চিন্তা করতে হবে, নিজের মেধা দিয়ে নতুন ধরনের সব ইউনিক জিনিস করতে হবে। ইন্তারনেটে আবার অনেকে গল্প লিখেন, কবিতা লিখেন, ফটোগ্রাফি করেন, প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এমন সব কিছুতেই থাকতে হয় ভালো কিছু, নতুন কিছু যাতে মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর ভাল এবং নতুন কিছু করার চেষ্টা বাড়ায় আমাদের সৃজনশীলতা। কোটি মানুষের সামনে নিজেকে আলাদা ভাবে তুলে ধরার এবং সবার মাঝে পরিচিতি পাবার আশা থাকে সবার মাঝেই। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেটা করার জন্যই আমাদের হতে হয় সৃজনশীল এবং অনন্য।

No comments:

Post a Comment