Friday, April 17, 2020

যুগে যুগে মহামারীর ইতিকথা



করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। শেষ পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আল্লাহ ভালো জানেন। তবে যুগে যুগে এ ধরনের মহামারী দেখা গেছে। এসব প্রাণঘাতী ব্যাধির মধ্যে রয়েছে জিকা ভাইরাস, ইবোলা, হলুদ জ্বর, কুষ্ঠরোগ, কালাজ্বর, বসন্ত, কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়া, প্লেগ, যক্ষ্মা, টাইফয়েড, হাম ইত্যাদি। এসব রোগে মানবসমাজ বিপন্ন ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মানুষ যখন আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয় তখন তাদের সরল সঠিক পথের সন্ধ্যান দিতে এ ধরনের মহামারী দেখা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জহারাল ফাসাদু ফিল বাররি ওয়াল বাহরি বিমা কাসাবাত আইদিন্নাস।’ অর্থাৎ জলে-স্থলে যে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে তা মানুষের হাতের কামাই। এখন করোনা মহামারী দেখার পর মসজিদগুলোতে প্রার্থনা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এসব নতুন নতুন রোগের প্রতিষেধক বের করেছেন। মানবসমাজ আল্লাহর ইচ্ছায় মহামারীকে বশীকরণ করার পন্থাও উদ্ভাবন করেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যায়ে চীনের উহান শহর থেকে উত্থিত ‘করোনাভাইরাস কোভিড-১৯’ নতুন করে বিশ্বকে আকস্মিক সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব যখন আতঙ্কিত, তখন নতুন করে আলোচনায় আসছে অতীতের মহামারী ও সেগুলোর ধ্বংসাত্মক প্রভাব। গত শতাব্দীর দুটি বিশ্বযুদ্ধসহ পারমাণবিক বোমা বিশ্বকে করে রেখেছে মৃত্যুপুরী। বন্যা, খরা, অগ্ন্যুৎপাত, ভূকম্পন, সাইক্লোন, সুনামি, মহামারী পৃথিবীকে করেছে বিপর্যস্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ২০১১-২০১৭ এই সাত বছরে বিশ্বব্যাপী ১৩০৭টি মহামারীর মতো ঘটনা ঘটছে। ভূতত্ত্ববিদ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বলেছেন, ১০০ বছর পরপর প্রকৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে রয়েছে বিশাল আকার প্লেট, যা প্রকৃতির নিয়মে অবিরত নড়াচড়া করছে। বলা হচ্ছেÑ প্রতি ১০০ বছর পরপর প্রকৃতির বড় পরিবর্তন ঘটছে।


এর ফলে মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গ্রামকে গ্রাম উজাড় হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে নগরসভ্যতা। লিখিতভাবে আমরা এসব মহামারী এবং মানবসভ্যতায় তার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের নিদর্শন জানতে পারি। এমনকি মহাবিশ্বের বিস্ময়, মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বিভিন্ন জাতির নাফরমানির কারণে মহামারীতে ধ্বংসের কথা জানা যায়। এখন মহামারীর কারণ ভাইরাস রোগ। ভাইরাস হলো এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র অণুজীব। ভাইরাস অর্থ বিষ। আদিতে যেকোনো ধরনের বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হতো। ভাইরাস আবিষ্কারের বহু আগে এই মহামারীতে শত শত নগরসভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা মিসরীয় মমির গায়ে বসন্তরোগের চিত্র পাওয়া গেছে। ইতিহাসের বহু পুরনো যুগে মিসরের ফেরাউনরা বিশ্বকে শাসন করত। এই গোষ্ঠী ধ্বংস হয়েছে গুটিবসন্তে। থুকিডাইসিসের রচনা থেকে আমরা জানতে পারি, পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয়েছিল গ্রিক নগররাষ্ট্র এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে, তখন টাইফাস মহামারীতে এথেন্সের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ মারা যায়। এ কারণে স্পার্টার জয়লাভ করা সম্ভব হয়েছিল।

একসময় ‘দুনিয়ার বাতিঘর’ বলা হতো রোমকে। সেই রোম ১৬৫ থেকে ১৮০ খ্রিষ্টাব্দ মাত্র ১৫ বছরে জনমানবশূন্য হয়ে যায় গুটিবসন্তের মহামারীতে। সেই সময় রোমকে বলা হতো ‘ভূতের নগরী।’ এমনকি গোটা রোমে বাতি জ্বালানোর মতো কোনো মানুষ ছিল না। রাজপরিবারের সদস্যরাও এর কবল থেকে রেহাই পাননি। বিখ্যাত রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের ভাই লুইসিয়াস ভেরাসও মারা যান মহামারীতে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ সালে ‘গ্রিসের ফুসফুস’ নামে খ্যাত এথেন্সে বসন্ত রোগে ৩০ হাজারের বেশি লোক মারা যায়, যা ওই শহরের ২০ শতাংশ মানুষ। ওই রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক। এ ছাড়া বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়। ২৫০ খ্রিষ্টাব্দে সাইপ্রিয়ানের প্লেগ মহামারী বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এরপর পঞ্চম শতাব্দীতে এক দিকে যুদ্ধ, অপর দিকে মহামারী পরাক্রমশালী রোমান সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রথম ভাগে রোমান সাম্রাজ্যের পূর্ব অংশের সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান সাম্রাজ্যকে প্রতাপশালী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, বুবোনিক মহামারীতে তার মৃত্যু সে সম্ভাবনাকে শেষ করে দেয়। পরবর্তী দুই শতাব্দীতে এ প্লেগে প্রায় ১০ কোটি মানুষ মারা যায়। এই রোগ মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এটা ইতিহাসের সব চেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারী হিসেবে গণ্য। লাশের দুর্গন্ধে আকাশ-বাতাস দূষিত হয়ে পড়েছিল। পশু-পাখি, কীটপতঙ্গও এতে মারা যায়। পঞ্চম শতকে ইরাক, ইরান তথা মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায় প্লেগ রোগে। বলা হয়Ñ পারস্যের অর্ধেক মানুষ মারা যায় এই রোগে।

ষষ্ঠ শতকের প্রথমার্ধে পুরো দুনিয়ায় ৪০ শতাংশ মানুষ মারা গিয়েছিল প্লেগ রোগে। ৭৩৫-৭৩৭ এই দুই বছরে জাপানে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। একই সময় প্লেগ রোগে বাইজানটাইন সাম্র্রাজ্য ধ্বংস হয়। ১৬ শতকে মেক্সিকোতে ৮০ শতাংশ, ইতালিতে তিন লাখ মানুষ প্লেগ রোগে মারা যায়। দুনিয়াব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড ও অজানা রোগে ৯০ শতাংশ মানুষ মারা গিয়েছিল। উনিশ শতকে ইনফ্লুয়েঞ্জা সারা দুনিয়া নাড়িয়ে দেয়। ১৩৩৪ সালে গ্রেট প্লেগ অভ্ লন্ডন হিসেবে স্বীকৃত প্লেগ আসে চীন থেকে। এরপর ইতালির কেবল ফ্লোরেন্স শহরেই মারা যায় ছয় মাসে ৯০ হাজার মানুষ। কয়েক বছরে এশিয়া-ইউরোপে মারা গিয়েছে পাঁচ কোটি মানুষ। প্লেগ রোগটি একটি জীবাণুবাহী ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট। এর সৃষ্টি কোথা থেকে, এর সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইঁদুরের খাদ্য ও প্রস্রাব থেকে এই ভয়াবহ রোগটি হয়েছে।

এই রোগটির সম্ভবত এশিয়ায় উৎপত্তি এবং পরে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারীর কবলে পড়ে ১৪০০ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৫০-৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে স্প্যানিশ বণিকরা নিয়ে আসে স্মল পক্স, বুবোনিক প্লেগ ও হামের রোগ জীবাণ্।ু ৯০ ভাগ আদিবাসী এসব রোগে মারা যায়। ১৫১৯ সালে বর্তমান মেক্সিকোতে স্মল পক্স বা গুটিবসন্ত ছড়িয়ে পড়লে দুই বছরে প্রাণ হারায় প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। ১৫২০ সালে ইউরোপিয়ানদের সাথে আসা একজন আফ্রিকান দাস স্মল পক্স নিয়ে এলে গোটা অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারী ঔপনিবেশিক শক্তি আমেরিকায় শুধু তরবারী দিয়ে হত্যা করেনি, রোগ-বালাইও নিয়ে এসে অসংখ্য মৃত্যুর কারণ হয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলছে, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ানদের বয়ে আনা জীবাণুর কারণেই আমেরিকার প্রায় পাঁচ কোটি ৬০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।

১৬৩৩ সালে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডবাসীর মাধ্যমে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে স্পল পক্স ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রায় দুই কোটি মানুষ মারা যায় বলে দাবি করেছিলেন ইতিহাসবিদরা। ১৬৬৫ সালের দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডনে এর জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মৃত্যুবরণ করে। ১৭৯৩ সালে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় ‘ইয়েলো ফিভার’ মহামারী আকার ধারণ করে। এতে নগরের ১০ ভাগের একভাগ বা প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৮৫৫ সালের দিকে চীন, হংকং ও ভারতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ প্লেগে মারা গেছে। ১৯১৮ সালে শুরু হওয়া স্প্যানিশ ফ্লুতে পৃথিবীতে মারা যায় পাঁচ কোটি মানুষ।

মহামারীর এ রকম বহু নিদর্শন পাওয়া যায় ইতিহাসে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যুগে যুগে শত শত নগরসভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে। তেমনি ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭২০ সালে দুনিয়াজুড়ে ২০ কোটি মানুষ প্লেগ রোগে মারা গিয়েছে। তার ১০০ বছর পর শুধু ভারতে ও পূর্ব এশিয়ায় কলেরা রোগে মারা যায় লাখ লাখ মানুষ এবং আফ্রিকা-ইউরোপে বসন্ত রোগে মারা যায় ৩৫ লাখ মানুষ। তারও ১০০ বছর পর দুনিয়াজুড়ে মারা যায় পাঁচ কোটি মানুষ। ১৮৬০ সালে বা আধুনিক যুগে প্লেগ ছড়ায় আবার। এতে চীন, ভারত ও হংকংয়ে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হয়। পরে ১৮৯০ এর দশকে প্লেগের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়। বিশ শতকের সবচেয়ে বড় প্লেগ মহামারী দেখা দেয় ১৯১০ সালে। তখন চীনের মাঞ্চুরিয়ায় দুই বছরে মারা যায় ৬০ হাজার মানুষ। বিশ্বজুড়ে ১৯১৮ সালে সূচিত, গ্রেট ফ্লু মহামারীতে দুই বছরে মারা যায় তিন কোটির মতো মানুষ। ১৯১৮ ও ১৯১৯ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে বিশ্বব্যাপী মারা যায় প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। ভয়াবহ এ রোগকে তখন নাম দেয়া হয় ‘স্প্যানিশ ফ্লু’। এটি ‘দ্য ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যানডেমিক’ নামেও পরিচিত। গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৭৯৬ সালে। টিকা আবিষ্কারের ২০০ বছর পরও এই রোগে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ভারতে। ১৯৭০ সালে লক্ষাধিক মানুষ রাতারাতি আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ১৯৭৫ সালে ভারত নিজেকে গুটিবসন্তমুক্ত ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছে। আমেরিকায় ১৯৫২ সালে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয় ৬০ হাজার শিশু। এতে তিন হাজারের বেশি মারা যায়। প্রথম এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয় ১৯৮৪ সালে। এই ভাইরাসের কারণে এইডস রোগে সে বছর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে মারা যায় পাঁচ হাজার ৫০০ জন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত। এ পর্যন্ত এইডসে মারা গেছে আড়াই কোটির মতো মানুষ।

সার্স বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম ২০০২ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৩ সালের জুলাইয়ের মাঝে ১৭টি দেশে ৭৭৮ জন মানুষের প্রাণ সংহার করেছিল। বিশ্বজুড়ে ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু বা এইচ ওয়ান এন ওয়ান ফ্লুতে ১৮ হাজার ৫০০ জন মারা গেছে। এই রোগের মৃত্যুর সংখ্যা মোট পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার বলে ধারণা করা হয়। হাইতিতে ২০১০ সালে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের পর কলেরা মহামারীর রূপ নিলে ১০ হাজার মানুষ মারা যায়। ২০১২ সালে ভাইরাসজনিত রোগে মারা যায় দুই লাখ ২২ হাজার মানুষ। সে বছর পুরো বিশ্বে ব্যাকটেরিয়াবাহিত সংক্রামক রোগ যক্ষায় মারা যায় ১.৩ মিলিয়ন মানুষ। প্রতি বছর টাইফয়েড জ্বরে মারা যাচ্ছে দুই লাখ ১৬ হাজার। জিকা ভাইরাস উগান্ডার জিকা ফরেস্ট এলাকায় বানরের মধ্যে ১৯৪৭ সালে প্রথম ধরা পড়ে। ২০১৯ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বর। ছড়িয়ে পড়ে এতে ফিলিপাইনে প্রায় ৯০০ লোক মারা গেছে। বাংলাদেশের মতো থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু।

করোনাভাইরাসটি ১৯৬০-এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। শব্দটি ল্যাটিন করোনা থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ মুকুট। মনে করা হচ্ছেÑ সার্স বা ইবোলার চেয়ে অনেক বিপজ্জনক এটা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসটি মানুষের দেহকোষের মধ্যে গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। এ কারণে এটি বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। করোনাভাইরাসের আরেক নাম কোভিড-১৯। এর অনেক প্রজাতি আছে। এর মধ্যে সাতটি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন, এ ভাইরাসটি একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে দ্রুত ছড়াতে পারে। করোনাভাইরাস ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াচ্ছে। সাধারণত ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। করোনার প্রথম লক্ষণ হলোÑ শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। এর সাথে সাথে থাকে জ্বর ও কাশি। দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। হতে পারে নিউমোনিয়া। ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনা কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলোÑ যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে বা ভাইরাস বহন করছে, তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। ডাক্তারের পরামর্শ হলো বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা। অসুস্থ হলে মাস্ক পরতে হবে। আর নিজে অসুস্থ না হলেও অন্যের সংস্পর্শ এড়াতে মুখোশ বা মাস্ক পরুন। কেননা, চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংস্পর্শ এসে ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাসটি অন্যান্য শহর এবং চীনের বাইরে থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়ে।

করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। এই ভাইরাস চীনের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, মালয়েশিয়া। ছড়িয়ে পড়েছে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আমেরিকাতেও।

একবার যদি ভাইরাসের উৎস প্রাণীকে শনাক্ত করা যায়, তাহলে রোগটি প্রতিষেধক তৈরি করা সহজ হবে। করোনাভাইরাসের সাথে জড়িত চীনের উহানে অবস্থিত, সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারের সাথে। কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনাভাইরাস বহন করতে পারে। ওই বাজারে অনেক জীবন্ত তিমি থাকে। মুরগি, বাদুড়, খরগোস, সাপ এসব প্রাণী করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়। তারা দাবি করেছেন, এই সংক্রমণ নিম্নমাত্রার হলেও দেড় কোটি, আর মাঝারি মাত্রার হলেও এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই গবেষকরা বলছেন, একেবারে নি¤œমাত্রার মহামারী হলেও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে আসতে পারে ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাদের মতে, সংক্রমণে বেশি মানুষ মারা যাবে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে। তাদের মতে, নিম্নমাত্রায় মহামারী হলে চীন ও ভারতে কয়েক মিলিয়ন করে মানুষ মারা যাবে।

No comments:

Post a Comment